Featured Post

মুঠোফোন যেভাবে ধ্বংস করে দিচ্ছে আমাদের শিশুদের শৈশব-Rumaisa's Blog




আজকের আধুনিক বিশ্বে বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে আমাদের হাতের নাগালের মধ্যে চলে এসেছে মুঠো ফোন, আইপ্যাড এবং অন্য সব ইলেকট্রনিক্স পণ্য। বর্তমানে আমাদের জীবন স্মার্ট ফোন ছাড়া যেনো অচল ,ইন্টারনেট যেনো হয়ে গেছে অক্সিজেন এর পরিপূরক ! এসব ছাড়া আমরা আমাদের জীবন কল্পনাও করতে পারিনা এখন। মোবাইলে কথা বলা, মেসেজ দিতে পারাই এখন কেবল মাত্র যথেষ্ট নয়, স্মার্ট ফোন এ থাকতে হবে হাজারও অপসন। এমনকি হাত ঘড়ি পড়ার প্রয়োজন ও ফুরিয়ে গেছে মোবাইল ফোনের বদৌলতে। বর্তমানে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে এসব প্রযুক্তির ব্যবহার অবসম্ভাবী। কিন্তু আমরা যখন এসব প্রযুক্তি খেলনা হিসেবে আমাদের ছোট্ট ছোট্ট শিশুদের হাতে তুলে দিচ্ছি তখন কি আমরা একবার ও ভেবে দেখেছি এর পরিণতি কি হতে পারে ?আমি নিজে নব্বই দশকে জন্ম নেয়া, বড় হওয়া। আমাদের যুগ থেকে প্রযুক্তির প্রসার ঘটলেও তখন এসব প্রযুক্তি ছিলোনা হাতের নাগালের মধ্যে. তাই আমরা বড়ো হই একগাদা গল্পের বই পরে,বিকেলে মাঠে কানামাছি, বৌ কথাকও খেলে । আমাদের সময়ে স্কুল ব্যাগে পাঠ্যপুস্তকের সাথে থাকতো "তিন গোয়েন্দার"বই. আর সেই বই লেনদেন চলতো বন্ধুদের মধ্যে.একজনের পড়া হলে পালা করে সেই বই পড়তে নিতাম সবাই। জন্মদিনের উপহার হিসেবে প্রথম যেই উপহারের কথা মাথায় আসতো সেটা হলো 'বই' . বন্ধুরাও তাদের পছন্দের বইটা উপহার হিসেবে পেয়ে মহা খুশি থাকতো। ভাবতো যাক এই বইটা আর আমার কেনা লাগলো না.. হাহা।

তখন কোনো ইলেকট্রনিক্স কিনতে বাবা মায়ের পিছনে বায়না ধরে থাকতে হতো দিনের পর দিন ,এমন না যে তখনকার বাবা মায়েদের অর্থ সামর্থ ছিলোনা ওসব কিনে দেয়ার বরংচ সেই টাকা দিয়ে বই কিনে দেয়ার পক্ষপাতী ছিলেন উনারা ।কারণ নিজেদের বিচক্ষণতা থেকে জানতেন বই পড়ার গুরুত্ব কতটা। আজকের যুগের ডিজিটাল বাবা মায়েরা নিজেদের মধ্যে যেমন বই পড়ার অভ্যাসকে মুঠোফোনের ব্রাউসার দিয়ে প্রতিস্থাপন করে দিয়েছে , তেমনি তাদের সন্তানের হাতেও তুলে দিচ্ছে আইপ্যাড ,ল্যাপটপ,মোবাইল ফোন।আমরা কি একবার ও ভাবি, ছোট্ট সন্তানটিকে ব্যস্ত রাখার জন্যে যখন তার হাতে মোবাইল ফোনটা তুলে দিচ্ছি এর পরিণতি কি হতে পারে ? ছোট্ট শিশুটির যখন চারদিকে তাকিয়ে নিজের পরিবেশ থেকে শিক্ষা নেয়ার কথা;গাছ,ফুল,পাতা,পাখি দেখে,মাঠে খেলে বড়ো হওয়ার কথা সেখানে সে ঘরের এককোনায় বসে ব্যস্ত ডিজিটাল গেম নিয়ে । চলুন দেখি এর ফলে বাচ্চাটির কি কি ক্ষতি হতে পারে :

শারীরিক এবং মানসিক ক্ষতি :

অনবরত মোবাইল ফোনের স্ক্রিন অথবা কম্পিউটার স্ক্রিন এর দিকে তাকানোর ফলে শিশুটির চোখের সমস্যা দেখা দিতে পারে। মোবাইল ফোনে অথবা কম্পিউটারে খেলার ফলে বাস্তবিক জীবনে বন্ধুর
প্রয়োজনবোধ করেনা এসব শিশুরা। যেখানে মাঠে খেলা ধুলায় অন্য বাচ্চাদের সাথে খেলার এবং মেলামেশার সুযোগ থাকে। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে বড়দের তুলনায় শিশুদের উপর মোবাইল
ফোনের রেডিয়েশনের প্রভাব পরে অনেক বেশি। অনেক শিশুর অভ্যাস আছে দীর্ঘসময় ফোনে কানের কাছে রাখার যারফলে নন-ম্যালিগন্যান্ট টিউমার হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায় , বিশেষত ব্রেন ও কানে।

ইলেক্ট্রনিক্সে আসক্তি বৃদ্ধি :

অনবরত মোবাইল ফোনে খেলার ফলে শিশুটির ইলেক্ট্রনিক্সে আসক্তি বাড়তে থাকে। যারফলে শিশুটি ঘন্টার পর ঘন্টা সময় অতিবাহিত করে মোবাইল ফোনে অথবা কম্পিউটারে। এমনকি অন্য যেকোনো কাজের মাঝেও দেখা যায় শিশুটির মনোযোগ আটকে আছে মোবাইল ফোনের বোতামে।

বই পড়ার অভ্যাস সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাওয়া :

মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে দীর্ঘসময় অতিবাহিত করার ফলে শিশুটির মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস কমতে থাকে,বইয়ে মনোযোগ দেয়া কঠিন হয়ে পরে।বইয়ের অক্ষরের চেয়ে ডিজিটাল দুনিয়ার চকচকে বেশি আকৃষ্ট হয়ে পরে।

অস্থির স্বভাবের হওয়া :

শিশুটির মধ্যে অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়.রাতে দীর্ঘক্ষণ ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকার ফলে ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে যারফলে বাচ্চার মেজাজ খিটখিটে হতে থাকে।

সামাজিক পরিবেশে অসস্তিবোধ করা :

বাইরে খেলাধুলা না করার ফলে শিশুটি অন্যদের সাথে মেশা,বন্ধুত্ব করার সুযোগ পায়না.ধীরে ধীরে শিশুটি সামাজিক পরিবেশ থেকে দূরে যেতে থাকে,তখন দেখা যায় কোনো সামাজিক মিলনমেলা বা ঘরোয়া অনুষ্ঠানেও শিশুটি কেবল মাত্র মোবাইল ফোনে স্বস্তি খুঁজে পায়।

অতএব, বুঝতেই পারছেন আমাদের আদরের ছোট্ট সন্তানদের হাতে এসব ইলেকট্রনিক্স তুলে দিয়ে আমরা কত বড়ো ভুল করছি । আদতে আমাদের সন্তানদের যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলা শিখানোর প্রয়াসে আমরা যে ভুল পথটি বাছাই করে নিচ্ছি সেটা আমরা বুঝতেই পারছিনা। তাই সময়ে থাকতে এইভুল পথ থেকে সরে আসতে হবে। মোবাইল ফোনের বদলে বই তুলে দিতে হবে আদরের সন্তানটির হাতে আর খেলার জন্যে ঘরের কোনে ডিজিটাল দুনিয়াতে আটকে না রেখে বাইরে নিয়ে যেতে হবে...তবেই শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে একটি স্বাস্থকর নতুন প্রজন্ম গড়ে উঠবে।

Related Posts

Comments