Featured Post

বিস্ময়কর সামুদ্রিক প্রাণী | Amazing Sea Creatures

বিস্ময়কর সামুদ্রিক প্রাণী  Amazing Sea Creatures


বিস্ময়কর সামুদ্রিক প্রাণী

মহাসাগর আজও মানুষের কাছে বিস্ময় এবং রহস্যের স্থান। সাগরতলের বৈচিত্র্যময় এবং বিস্ময়কর প্রাণীদের কথা জানতে বিজ্ঞানীদের একের পর এক অভিযান চলছে বহু যুগ ধরে। তারপরেও অতল সাগরের কেবল মাত্র ৫% প্রাণীর কথা আমরা জানতে পেরেছি। চলুন আজকে পরিচিত হওয়া যাক কিছু বিস্ময়কর সামুদ্রিক প্রাণীর সাথে যা আপনার কল্পনাকেও হার মানাবে। 


স্টারফিশ (Royal starfish):


বিস্ময়কর সামুদ্রিক প্রাণী Amazing Sea Creatures


দেখতে রাজকীয়, উজ্জ্বল রংয়ের বলে একে রয়েল স্টারফিশ বা রাজকীয় স্টারফিশ বলা হয়। এটি মেক্সিকো উপসাগর ক্যারিবিয়ান সাগর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলে পাওয়া এক প্রজাতির স্টারফিশ। দেখতে খুবই সুন্দর এই স্টার ফিশের শরীর গাঢ় নীল বা বেগুনি হয়ে থাকে। পাঁচটি বাহুর প্রান্তিকে কমলা কালারের প্লেটযুক্ত। রাজকীয় স্টারফিশ একটি মাংসাশী প্রাণী। এটি শিকারকে বাহু দিয়ে চেপে ধরে মুখে গহব্বরে চালিত করে এবং গিলে ফেলে। 

মাছটি আকারে অনেক ছোট; লম্বায়  0.৮ ইঞ্চি থেকে ৪ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে,ওজন ৫ কেজির মতো। 


রিবন ঈল (Ribbon EEL):


বিস্ময়কর সামুদ্রিক প্রাণী  Amazing Sea Creatures


রিবন ঈল পাতলা লম্বা এবং উচ্চ পাখনা যুক্ত এক প্রাণী যা অনেকটাই পৌরাণিক চীনা ড্রাগনের সাথে সাদৃশ্যযুক্ত। প্রায়ই ইন্দোনেশিয়ার পানিতে এই প্রাণীটির দেখা মিলে।এছাড়াও ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরের লেগুনা এবং রীফে এদের দেখা পাওয়া যায়। রিবন ঈল সম্পর্কে এমন কিছু আশ্চর্যজনক তথ্য আছে যা আপনাকে অবাক করে দিবে! রিবন ঈল এদের জীবন চক্রের তিনটি ধাপে কেবলমাত্র শরীরের রংই পরিবর্তন করে না সম্পূর্ণ লিঙ্গও পরিবর্তন করে ফেলে!


রিবন ঈল কিশোর হিসেবে জীবন শুরু করে। যখন তাদের শরীরের রং থাকে গভীর কালো এবং পাখনার রং থাকে গাঢ় হলুদ বর্ণের। 


বয়স বাড়ার সাথে সাথে রিবন ঈল পুরুষে পরিণত হয়। এর গায়ের রং পরিবর্তন হয়ে কালো থেকে ইস্পাত নীল রংয়ের হয়ে যায় এবং পাখনার রং হয় প্রাণবন্ত হলুদ। 


বিস্ময়কর সামুদ্রিক প্রাণী Amazing Sea Creatures


পুরুষ রিবন ঈল বাড়তে থাকে এবং যখন প্রায় ১.৩ মিটার / চার ফুটের হয় তখন আবার এদের রঙ পরিবর্তিত হয়। এটি সম্পূর্ণ হলুদ রঙের হয়ে যায়। আর তখনই রিবন ঈল লিঙ্গ পরিবর্তন করে মহিলা হয়ে যায়। একটি মহিলা ঈল ডিম দিতে সক্ষম। অত্যন্ত পাতলা দেহ হওয়া সত্ত্বেও এরা প্রাকৃতিক আবাসে ২০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে বলে মনে করা হয়। 


উড়ন্ত মাছ (Flying Fish):


বিস্ময়কর সামুদ্রিক প্রাণী Amazing Sea Creatures

ফ্লাইং ফিশ বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর সামুদ্রিক প্রাণীদের মধ্যে তিন নম্বরে অবস্থিত। মাছটিকে মূলত নামকরণ করা হয় "এক্সও কোটা টায়( Exo kota tay)" নামে। যদিও এই মাছটি আসলে পাখির মতো উড়তে পারে না তবে এরা পানি থেকে মিসাইল এর মত অনেক উপরে উঠে যেতে পারে। এক্সসেট(Exocet)মিসাইল এর নামকরণ করা হয় এই মাছটির নামে। এই অস্বাভাবিক মাছগুলির দৈর্ঘ্য প্রায় 6 থেকে 20 ইঞ্চি। উড়ন্ত মাছগুলি আসলে উড়ে না; তারা বাতাসে ভেসে থাকে। 


এরা পানির উপর দিয়ে খুব উচ্চ গতিতে উড়ে যায়। উড়ন্ত মাছের সর্বকালের দীর্ঘতম সময় ধরে  ভেসে থাকার রেকর্ড হচ্ছে  ৪৫ সেকেন্ড এবং গতি ৩০কিমি / ঘন্টা (১৯ মাইল)-  Guinness World Records. অনুসারে 


ফ্রিল্ড হাঙ্গর (Frilled Shark):


বিস্ময়কর সামুদ্রিক প্রাণী |  Amazing Sea Creatures

ফ্রিল্ড হাঙ্গরকে লিভিং ফসিল বলা হয়। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে আজ পর্যন্ত এই মাছটির তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। ২০০৪ সালে সমুদ্র গভীরে সর্ব প্রথম মাছটিকে দেখতে পাওয়া যায়। মাছটি সাধারণত সমুদ্রের ২০০ থেকে ৪২০০ফুট গভীরে থাকে তাই সাধারণ মানুষের চোখে মাছটি ধরা দেয়না।


বিস্ময়কর সামুদ্রিক প্রাণী | Amazing Sea Creatures

এই হাঙ্গরের আকৃতি অন্য প্রজাতির হাঙ্গরের মতো নয়,এটি দেখতে ঈল বা সাপের মতো লম্বা। এরা লম্বায় ৬.৫ - ৭ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। পূর্ব আটলান্টিক এবং পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরগুলির অঞ্চলে দুই প্রজাতির ফ্রিল্ড হাঙ্গর বিতরণ করে। 

পিঙ্ক সী কিউকাম্বার (Pink sea cucumber):


বিস্ময়কর সামুদ্রিক প্রাণী | Amazing Sea Creatures

সী কিউকাম্বার বা সাগর শসার সাথে তো আমরা সবাই কম-বেশি পরিচিত। পিঙ্ক সী কিউকাম্বার খুবই সুন্দর সামুদ্রিক প্রজাতি। তবে ২০০৭ সালের আগে পর্যন্ত এটি আবিষ্কৃত হয়নি।


বিস্ময়কর সামুদ্রিক প্রাণী | Amazing Sea Creatures

বিজ্ঞানীরা সর্বপ্রথম সমুদ্রের ৮২০০ফুট গভীরতায় এই আশ্চর্যজনক প্রাণীটির আবিষ্কার করেন। সারি সারি গোলাপী ছোট কাঁটা প্রাণীটির সবুজ এবং হলুদ শরীর বরাবর জুড়ে থাকে। 


অ্যাঙ্গেলার ফিশ(Angler Fish):


বিস্ময়কর সামুদ্রিক প্রাণী |  Amazing Sea Creatures

অ্যাঙ্গেলার মাছ সী ডেভিল/ সাগর দানো নাম পরিচিত। কুৎসিত এবং ভয়ঙ্কর দেখতে এই মাছটি গভীর সমুদ্রে থাকে। এটি মাংসাশী এবং বেশ হিংস্র। গভীর সমুদ্রের মাছ হওয়ায় অ্যাঙ্গেলার মাছ আলোর সাহায্যে শিকার ধরে থাকে। এদের মাথার উপর দণ্ডের মতো একটি অংশ রয়েছে যেখানে আলো তৈরী হয়। আলো দেখে শিকার কাছে আসা মাত্রই অ্যাঙ্গেলার ফিশ শিকারটিকে গিলে ফেলে। অ্যাঙ্গেলার ফিশ এদের চোয়াল এবং পেট এতটাই প্রসারিত করতে পারে যে এদের আকারের দ্বিগুণ পর্যন্ত শিকার অনায়াসে গিলে ফেলতে সক্ষম। গভীর সমুদ্রে খাবারের সল্পতার কারণে এরা অধিক সময়ের জন্যে খাদ্য সঞ্চয় করতে পারে। 

একটি নারী অ্যাঙ্গেলার ফিশের দৈর্ঘ্য ১ মিটার পর্যন্ত হতে পারে ;অন্যদিকে একটি পুরুষ অ্যাঙ্গেলার ফিশ ৪ সেন্টিমিটারের বেশি হয়না। পুরুষ অ্যাঙ্গেলার ফিশ নারী মাছটির শরীরে পরগাছার মতো লেগে থাকে। 


বায়োলুমিনসেন্ট জেলিফিশ(Bioluminescent jellyfish):


বিস্ময়কর সামুদ্রিক প্রাণী |  Amazing Sea Creatures

মাছটিকে দেখে মনে হবে সমুদ্রের অতল গভীর অন্ধকারের মধ্যে যেন উজ্জ্বল লাল,হলুদ ইলেকট্রিক বাতির আলোকপ্রদর্শনী চলছে। অদ্ভুত এবং বিস্ময়কর সুন্দর দেখতে বায়োলুমিনসেন্ট জেলিফিশের সন্ধান পাওয়া যায় মারিয়ানা ট্রেঞ্চের অন্ধকার গভীরে। ২০১৬ সালে সর্ব প্রথম এই জেলিফিশ আবিষ্কৃত হয়। সমুদ্রে ৪০০০ মিটার গভীরে বিচরণ এদের।এদের নিজস্ব আলো উৎপাদন করার ক্ষমতা রয়েছে।এরা মূলত শিকারী প্রাণী, আলো জেলে এবং লম্বা লম্বা কর্ষিকার সাহায্যে এরা শিকার ধরে থাকে।   


সমুদ্রের বুকে লুকিয়ে আছে হাজারো অজানা বিস্ময়। এই অজানার যতটুকুই মানুষ আবিষ্কার করতে পেরেছে , ততটুকুই তাকে বিস্মিত করেছে।সমুদ্রতলের প্রাণী বৈচিত্র্য নিয়ে মানুষের আগ্রহ তাকে বারবার আনে সমুদ্রের বুকে।




Related Posts

Comments